শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

নিয়মিত নামাজ পড়তেন, রোজা রাখতেন রোহানা বেগমে

Welftion Love Of Welfare  

      

শামুক ইয়াছিন আরাফাত

 

শামুক
ইয়াছিন আরাফাত

স্বামীর মৃত্যুর পর রোহানা বেগমের সংসারে অভাব-অনটন লেগেই আছে। আজ যদি সেই শামুকটা থাকত, তাহলে টাকা-পয়সার অভাব হতো না। ঘটনাটি প্রায় পঞ্চাশ বছর আগের, যখন রোহানা সপ্তম শ্রেণিতে পড়তেন। শিমপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তার জন্ম। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মতো রোহানাও ধার্মিক ছিলেন। নিয়মিত নামাজ পড়তেন, রোজা রাখতেন।

সেদিন বৃহস্পতিবার ছিল, স্কুল তাড়াতাড়ি ছুটি দিয়েছিল। বাড়ি ফিরে জোহরের নামাজ আদায় করে দুপুরের খাবার খেয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেন। বিকেলে তিনি দুই কিলোমিটার দূরে বাগানবাড়িতে ঘুরতে গেলেন, যেখানে তাদের গরুর খামার ছিল। আছরের নামাজের পর ফিরে আসেন। সেদিন রাতে পড়ালেখা শেষ করে এশার নামাজ আদায় করে ঘুমের প্রস্তুতি নিলেন। ঘুমানোর আগে ওযু করে দোয়া পড়ে শুয়ে পড়লেন।

হঠাৎ তিনি স্বপ্ন দেখলেন—একজন পাগলী পাহাড়ের রাস্তা ধরে আসছে এবং তার হাতে থাকা একটি শামুক রোহানাকে যত্নে রাখতে বলল। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুম ভেঙে গেল। পাশের মসজিদ থেকে ফজরের আযান ভেসে এলো। সেদিন আর ঘুম এল না তার। ফজরের নামাজ আদায় করে কোরআন তেলাওয়াত করলেন, তারপর বাড়ির অন্যান্য কাজ শেষ করলেন।

বাড়ির রোয়াকের সামনে এক পাগলীকে দেখে সবাই মজা করছিল। সে তার হাতে থাকা শামুকটি কাউকে দিচ্ছিল না। রোহানা কাছে গিয়ে দেখলেন, এ সেই পাগলী—যাকে তিনি স্বপ্নে দেখেছিলেন! তার পরনে একই ধরনের পোশাক ছিল। রোহানা শামুকটি চাইলে পাগলী বলল, "হ্যাঁ, তোকেই দেব, তোকেই দেব।"

শামুকটি দেখতে সাধারণ হলেও, যেন এক রহস্যময় কিছু ছিল তার মাঝে। শামুকটি পাওয়ার পর পাগলীটি কোথায় যেন মিলিয়ে গেল—আর কখনো কেউ তাকে দেখেনি। উপস্থিত সবাই বলল, "পাগলের জিনিস! ভালো কিছু হবে না।" তারা হাসাহাসি করলেও রোহানা চুপ করে রইলেন। স্বপ্নের কথা কাউকে বলেননি, এমনকি তার মাকেও না।

চার মাস পর রোহানা অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হলেন। পরিবার ভালো পাত্র দেখে ইলহামের সঙ্গে তার বিয়ে ঠিক করল। বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার সাত দিন পর তিনি বাপের বাড়ি এলেন। আলমারি খুলতেই দেখলেন—শামুকটি নেই! তিনি তো আসার সময় আলমারির চাবি মায়ের কাছে দিয়ে এসেছিলেন। তাই মাকে জিজ্ঞেস করলেন। তার মা বললেন, "এত দামি জিনিসের মধ্যে সামান্য শামুক রেখে লাভ কী? ওটা বাইরে ফেলে দিয়েছি।"

মায়ের কথায় রোহানার মাথায় যেন বজ্রাঘাত হলো! যেখানে শামুকটি ফেলা হয়েছিল, সেখানেই কয়েকদিন ধরে খুঁজলেন, কিন্তু কোথাও পেলেন না। তাকে পাগলের মতো খুঁজতে দেখে মা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন। তখনই রোহানা সব খুলে বললেন। মেয়ে যে এত মূল্যবান কিছু হারিয়েছে, তা বুঝতে পেরে মা কান্নাকাটি করে ক্ষমা চাইলেন। কিন্তু যা হারিয়েছে, তা তো আর ফেরত আসবে না।

আজ বহু বছর পেরিয়ে গেছে। বয়সের ছাপ পড়েছে শরীরে, চুল সাদা হয়ে গেছে, গায়ের রং মলিন হয়ে গেছে। পাঁচ মেয়ে ও দুই ছেলেকে রেখে স্বামীও চলে গেছেন না ফেরার দেশে। স্বামী থাকতে কখনো অভাব বুঝতে হয়নি। কিন্তু আজ, সংসারে অর্থকষ্ট চেপে বসেছে। আজ যদি সেই শামুকটি থাকত!

সেই শামুকটি ছিল এক আশ্চর্য বস্তু—যেটি একটি টাকার তলে রেখে, তলের ভিতরে না তাকিয়ে যতই টাকা নেওয়া হোক না কেন, সেই টাকা কখনো শেষ হতো না। কিন্তু আজ সেটি নেই...

সমাপ্ত


শেয়ার করুন

Author:

Welftion Love Of Welfare May Allah Blees Us - may allah bless you. Promote By, Al Towfiqi Family Towfiq Sultan

0 coment rios: