রাজনীতিবিদদের প্রতি আহ্বান দেশের স্বার্থে একসঙ্গে এগিয়ে চলুন
প্রিয় রাজনীতিবিদগণ,
বাংলাদেশ আমাদের সবার, কারও একার সম্পত্তি নয়। দেশের উন্নতি কোনো নির্দিষ্ট দলের একক দায়িত্ব নয়, এটি আমাদের সকলের সম্মিলিত দায়িত্ব। তাই, অনুগ্রহ করে দেশকে নিয়ে এককভাবে স্বপ্ন দেখবেন না—যে স্বপ্ন শুধু ব্যক্তি বা দলের স্বার্থ রক্ষা করে। ইতিহাস সাক্ষী, যাঁরা দেশকে ব্যক্তিগত সম্পত্তি ভেবে শাসন করতে চেয়েছেন, তাঁদের শেষ পরিণতি সুখকর হয়নি।
আমরা দেখেছি, ইতিহাসে অনেক বড় বড় নেতা "আমার দেশ, আমার স্বপ্ন" বলে এগিয়ে গিয়েছেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের সেই স্বপ্ন টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। একজন মানুষ বা একটি দল চিরকাল দেশ চালাতে পারে না, কিন্তু একটি সুসংগঠিত ও টেকসই নীতিমালা চিরকাল দেশকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারে। তাই সময় এসেছে ব্যক্তিগত স্বার্থের রাজনীতি পরিহার করে, দেশের জন্য একটি নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও দীর্ঘমেয়াদী নীতিমালা তৈরি করার।
আমরা কেন একটি স্থায়ী নীতিমালা চাই?
১. জাতীয় উন্নয়ন কেবল দলীয় এজেন্ডার বিষয় নয়:
উন্নয়ন কোনো একক সরকারের বিষয় নয়, এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। তাই ক্ষমতায় আসলে উন্নয়ন হবে, ক্ষমতায় না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে—এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
-
দলীয় বিভক্তির রাজনীতি দেশের অগ্রগতিকে পিছিয়ে দিচ্ছে:
আমরা কি দেখতে চাই, প্রতিবার সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে উন্নয়ন প্রকল্প থেমে যাবে? এক দলের করা উন্নয়ন প্রকল্প অন্য দল বন্ধ করে দেবে? তাহলে কীভাবে দেশ এগিয়ে যাবে? -
বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে হবে:
অতীতে আমরা দেখেছি, অনেক ক্ষমতাধর নেতা, যাঁরা "এই দেশ আমার, এই দেশ আমি গড়েছি" বলে অহংকার করতেন, সময়ের পরিক্রমায় তাঁদের দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে। কারণ দেশের মালিক জনগণ, কোনো ব্যক্তি বা দল নয়।
সমাধান কী?
আমাদের রাজনীতিবিদদের ব্যক্তিগত স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে দেশের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী নীতিমালা নির্ধারণ করতে হবে, যেখানে থাকবে—
✅ একটি নির্দিষ্ট উন্নয়ন রোডম্যাপ: দলীয় এজেন্ডার ঊর্ধ্বে উঠে, দেশের জন্য ২০-৩০ বছরের একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করা, যা যে কোনো সরকারই অনুসরণ করবে।
✅ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো ও শিল্প উন্নয়নের জন্য জাতীয় ঐক্যমত: কোনো দল পরিবর্তনের কারণে এসব ক্ষেত্রের উন্নয়ন থেমে যাবে না।
✅ একটি স্থায়ী রাজনৈতিক নীতিমালা: ক্ষমতায় আসার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে, কিন্তু প্রতিহিংসার রাজনীতি থাকবে না। বিরোধী দলকে শত্রু নয়, বরং দেশের অংশীদার ভাবতে হবে।
✅ সুশাসন ও আইনের শাসন: যে কোনো দল ক্ষমতায় থাকুক, সবার জন্য সমান ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
✅ বৈদেশিক সম্পর্ক ও অর্থনৈতিক নীতি: যেকোনো সরকার ক্ষমতায় আসুক, দেশের বৈদেশিক সম্পর্ক ও অর্থনৈতিক নীতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে, যাতে বৈশ্বিক আস্থার সংকট তৈরি না হয়।
সকল রাজনৈতিক দলকে আহ্বান
আসুন, আমরা "আমরা গেলে উন্নয়ন হবে, তারা গেলে হবে না" এই পুরনো রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসি। দেশ শুধু দলীয় রাজনীতির জন্য নয়, এটি জনগণের সম্পদ। আমাদের স্বপ্ন এককভাবে নয়, সম্মিলিতভাবে দেখা উচিত।
আমাদের ইতিহাস সাক্ষী, বিভক্ত রাজনীতি জাতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনেনি। আমরা যদি সত্যিই দেশকে ভালোবাসি, তাহলে আসুন—
✔ একটি দীর্ঘমেয়াদী নীতিমালা তৈরি করি।
✔ উন্নয়নকে দলীয় এজেন্ডার বাইরে রাখি।
✔ একটি সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলি।
এখন সময় এসেছে দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে, জাতির স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। যে দলই ক্ষমতায় আসুক, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে—এই নিশ্চয়তা যদি দিতে না পারি, তাহলে আমরা সত্যিকারের দেশপ্রেমিক নই।
পরিশেষে, সবাইকে মনে রাখতে হবে—দেশের চেয়ে বড় কিছু নেই। দল আসে, দল যায়, কিন্তু দেশ রয়ে যায়। তাই আসুন, আমরা একত্রে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার শপথ করি!
তৌফিক সুলতান, প্রকাশক & প্রধান সম্পাদক দৈনিক অনুসন্ধান নিউজ পোর্টাল।
রাজনীতিবিদদের প্রতি আহ্বান দল নয়, দেশকে সামনে রাখুন!
প্রিয় রাজনীতিবিদগণ,
![]() |
এই ছবিতে বাম পাশে জনাব ফরহাদ ফকির। |
আমরা বারবার একটি ভুল করছি—দেশকে ব্যক্তিগত সম্পত্তি ভাবছি, দলীয় সম্পদে পরিণত করছি। কিন্তু ভুলে যাবেন না, এই দেশ কোনো একক ব্যক্তি বা দলের নয়, এটি ১৮ কোটি মানুষের দেশ। এই দেশ কারও বাবার সম্পত্তি নয়, কারও ব্যক্তিগত স্বপ্নপূরণের ক্ষেত্রও নয়। অতীতের ইতিহাস দেখলেই বোঝা যায়, যে নেতা বা শাসক দেশকে ব্যক্তি স্বার্থে ব্যবহার করতে চেয়েছেন, তাঁরাও শেষ পর্যন্ত দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
"রাজনীতিতে ব্যক্তিগত স্বার্থের জায়গা নেই, যদি দেশপ্রেম থাকে!"—জন এফ কেনেডি
আজ আমরা আপনাদের সামনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবতা তুলে ধরতে চাই। যদি সত্যিকার অর্থে দেশকে এগিয়ে নিতে চান, তাহলে এই বাস্তবতাগুলো উপলব্ধি করা জরুরি।
ইতিহাস আমাদের কী শিক্ষা দেয়?
আমরা যদি ইতিহাসের দিকে তাকাই, তাহলে দেখতে পাব—যাঁরা ব্যক্তিগতভাবে দেশ চালাতে চেয়েছেন, তাঁরা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছেন।
✅ ১৯৭১: একদল স্বৈরশাসক মনে করেছিল, এ দেশ তাদের ইচ্ছামতো শাসন করবে। কিন্তু জনগণের আন্দোলনের সামনে তারা টিকতে পারেনি। বাংলাদেশ স্বাধীন হলো, কারণ জনগণ দল-মত নির্বিশেষে এক হয়েছিল।
✅ ১৯৯০: গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে দল-মত ভুলে মানুষ এক হয়েছিল। একনায়কতন্ত্র টিকতে পারেনি।
✅ বর্তমান বিশ্ব: শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, ভেনেজুয়েলা, আফগানিস্তানের দিকে তাকান। রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা কীভাবে দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে পারে, তার বাস্তব উদাহরণ এসব দেশ। তাই সময় থাকতে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে।
✅ বিদেশে পালানোর ইতিহাস:
- জুলফিকার আলী ভুট্টো ক্ষমতার জন্য লড়েছিলেন, শেষ পর্যন্ত নিজের দেশের মাটিতেই প্রাণ হারান।
- উগান্ডার স্বৈরশাসক ইদি আমিন দেশকে ব্যক্তিগত সম্পত্তি বানিয়েছিলেন, শেষ পর্যন্ত সৌদি আরবে নির্বাসিত জীবন কাটিয়েছেন।
- লিবিয়ার গাদ্দাফি মনে করতেন, দেশ তিনিই চালাবেন, কিন্তু একসময় তাঁর নিজের দেশের জনগণই তাঁকে ক্ষমতা থেকে টেনে নামায়।
এই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিন!
আজ যারা "আমার দেশ, আমার স্বপ্ন" বলে এককভাবে দেশ চালাতে চায়, একদিন হয়তো ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে।
আমাদের রাজনীতি আজ কোথায় দাঁড়িয়ে?
আমরা আজ এমন এক সময়ে এসে দাঁড়িয়েছি, যেখানে—
❌ রাজনীতি শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার খেলা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
❌ এক দল ক্ষমতায় থাকলে উন্নয়ন হয়, আরেক দল আসলে উন্নয়ন থেমে যায়।
❌ একদল অন্য দলের উন্নয়নমূলক প্রকল্প বন্ধ করে দেয়, শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে।
❌ দেশের সম্পদ লুটপাট হয়, কিন্তু কোনো জবাবদিহিতা থাকে না।
কিন্তু দেশ কী চায়? দেশ চায় স্থিতিশীলতা, শান্তি, ধারাবাহিক উন্নয়ন।
আমরা কী চাই?
আমরা চাই—
✅ একটি জাতীয় নীতিমালা: যেখানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো, শিল্পায়ন, অর্থনীতি, প্রশাসন—সবকিছুর জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা থাকবে, যা কোনো দল পরিবর্তনের কারণে বন্ধ হবে না।
✅ দল-মত নির্বিশেষে উন্নয়ন: সরকারের পরিবর্তন হলে উন্নয়ন থেমে যাবে, এটা হতে পারে না। উন্নয়ন কোনো দলের সম্পত্তি নয়, এটি জনগণের অধিকার।
✅ নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থা: আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে। কোনো দল ক্ষমতায় থাকুক বা না থাকুক, সবাই যেন আইনের প্রতি সমানভাবে দায়বদ্ধ থাকে।
✅ একটি জাতীয় ঐক্য: উন্নয়ন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ভিত্তিতে সব রাজনৈতিক দল একত্রিত হয়ে একটি জাতীয় নীতি গড়ে তুলবে, যা ভবিষ্যতে দেশ পরিচালনার মডেল হবে।
রাজনীতিবিদদের প্রতি খোলামেলা কিছু কথা
➡️ আমাদের জনগণ কোনো দলের দাস নয়।
➡️ এই দেশ কারও ব্যক্তিগত ব্যবসার জায়গা নয়।
➡️ ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য দেশকে বারবার ধ্বংসের পথে ঠেলে দেবেন না।
➡️ একটি দীর্ঘমেয়াদী নীতিমালা তৈরি করুন, যাতে দল পরিবর্তন হলেও দেশের উন্নয়ন থেমে না যায়।
➡️ আমরা সবাই রাজনীতি করি দেশের জন্য, কিন্তু দলীয় স্বার্থ যদি দেশের স্বার্থের চেয়ে বড় হয়ে যায়, তবে সেই রাজনীতি ধ্বংস ডেকে আনে।
আমরা চাই, আজকের রাজনীতিবিদরা এমন কিছু রেখে যান, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গর্ব করে স্মরণ করবে। আপনি যদি মনে করেন, "আমার দলই দেশকে বাঁচাবে"—তাহলে আপনি ইতিহাস ভুলে গেছেন। দেশ দল দিয়ে চলে না, দেশ চলে জনগণের ইচ্ছায়।
চূড়ান্ত বার্তা: আসুন, দেশকে বাঁচাই!
আমরা "আমরা গেলে উন্নয়ন হবে, তারা গেলে হবে না"—এই সস্তা রাজনীতি আর চাই না। আমরা চাই—
✔ একটি দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনা
✔ একটি স্থায়ী রাজনৈতিক নীতি
✔ দলীয় স্বার্থ নয়, জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়া
এখনো সময় আছে, আসুন, দল-মত ভুলে একসঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিই—বাংলাদেশকে কেমন দেখতে চাই?
আমরা যদি সত্যিকার অর্থে দেশপ্রেমিক হই, তাহলে এই সিদ্ধান্ত নিতে সময় লাগবে না। আর যদি সময় নষ্ট করি, তাহলে একদিন জনগণই এই সিদ্ধান্ত নিয়ে নেবে—আর তখন কারো কিছু করার থাকবে না।
পরিশেষে, সবাইকে মনে রাখতে হবে—দেশের চেয়ে বড় কিছু নেই। দল আসে, দল যায়, কিন্তু দেশ রয়ে যায়। দেশকে বাঁচান, রাজনীতিকে কলুষমুক্ত করুন। বাংলাদেশ আমাদের সবার, এটি ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়!
অনুপ্রেরণা - ফরহাদ ফকির, শিক্ষক - নরোত্তম পুর ফরহাদ ইসলামিয়া মাদ্রাসা।