পুরনো বন্ধুদের মিলনমেলা ২০১৫ ব্যাচের মনোহরদী ভ্রমণ ও স্মৃতিচারণ
বন্ধুত্ব এমন এক অনুভূতি, যা সময়ের ব্যবধান, দূরত্ব কিংবা জীবনের ব্যস্ততা সত্ত্বেও হৃদয়ে অটুট থেকে যায়। ২০১৫ সালের এসএসসি ব্যাচের বন্ধুরা যখন দীর্ঘদিন পর আবার একত্রিত হয়, তখন সেটি শুধু একটি দেখা-সাক্ষাৎ নয়—এটি হয়ে ওঠে স্মৃতি, নস্টালজিয়া আর আনন্দের এক অনন্য মিলনমেলা।
![]() |
আশিক, তামিম, রাকিব, সোহান, তানভীর ও তৌফিক সুলতান —বন্ধুত্বের ছবিতে বাঁধা এক মুহূর্ত" |
আজকের দিনটা আমার জন্য শুরু হয়েছিল অনেক ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে। দুপুরের দিকে হঠাৎ ফোন এলো আমার প্রিয় বন্ধু তানভীরের কাছ থেকে—
"আমরা মনোহরদী আসছি, তুই আসবি তো?"
এমন ডাকে সাড়া না দেওয়া অসম্ভব। কারণ তানভীর আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধুদের একজন।
তানভীরের সঙ্গে ছিল আশিক, তামিম, রাকিব ও সোহান—সবাই আমার স্কুলের সহপাঠী। মনে পড়ে গেল সেই সময়ের কথা—এসএসসি পরীক্ষার পর ভর্তি মৌসুমে আমরা আলাদা পথে পা বাড়িয়েছিলাম। আশিক, তামিম, সোহান ও তানভীর ভর্তি হয়েছিল আবদুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজে, রাকিব চলে গিয়েছিল একটি প্রাইভেট কলেজে, আর আমি ভর্তি হয়েছিলাম এম এ মজিদ সায়েন্স কলেজে।
![]() |
"এম এ মজিদ সায়েন্স কলেজের প্রাঙ্গণে ২০১৫ ব্যাচের ছয় বন্ধু—দীর্ঘদিন পর মিলিত হয়ে স্মৃতিচারণে মেতে ওঠা।" |
আজকের ছবিগুলো তোলা হয়েছে এম এ মজিদ সায়েন্স কলেজের সামনেই। সেখানে দাঁড়িয়ে আমরা স্মৃতির সোনালি পাতাগুলো উল্টে দেখছিলাম—স্কুল জীবনের খেলাধুলা, পরীক্ষার আগে হুড়োহুড়ি করে পড়া, বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কলেজ জীবনের আড্ডা আর নানা গল্পে ভরা দিনগুলো।
দীর্ঘ সময় আমরা কেবল স্মৃতি রোমন্থন করিনি, বরং একে অপরের বর্তমান জীবন নিয়েও কথা বলেছি। যাদের সাথে আজ দেখা হলো, তারা এখন জীবনের ভিন্ন ভিন্ন পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত—কেউ শিক্ষক, কেউ ডাক্তার, কেউ আবার বিসিএস ক্যাডার হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
![]() |
পুরনো বন্ধুদের মিলনমেলা ২০১৫ ব্যাচের ভ্রমণ ও স্মৃতিচারণ |
এর কয়েকদিন আগেই আমরা গিয়েছিলাম ক্যাফে শীতল হাওয়ায়—মনোহরদীর পাশেই কাপাসিয়ার খিরাটিতে অবস্থিত মনোরম এক ক্যাফে। পাশেই রয়েছে গোল্ডেন ক্যাফে। যদিও সেই দিনের ছবি তোলা হয়নি, তবুও সেই সময় কাটানো মুহূর্তগুলো মনকে ভরে দিয়েছিল।
আজকের আড্ডা শেষে আমরা মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছি মনোহরদীর আশপাশে—হাতিরদিয়া, ছোট সুকুন্ধীসহ আশেপাশের সুন্দর সুন্দর গ্রামীণ জনপদে। সবুজ মাঠ, সর্পিল গ্রামীণ রাস্তা, পুকুরপাড়ের শীতল হাওয়া—সব মিলিয়ে এই ভ্রমণ যেন আমাদের তারুণ্যের দিনগুলোকে ফিরিয়ে দিল।
![]() |
"স্কুল থেকে আজকের দিন—অটুট বন্ধুত্বের ছয়জন |
বন্ধুত্বের সৌন্দর্য হলো, এর জন্য কোনো বড় আয়োজন প্রয়োজন হয় না। কয়েকজন প্রিয় মানুষ, কিছু আন্তরিক আলাপ আর কিছু স্মৃতির আলো—এগুলোই যথেষ্ট একটি দিনকে বিশেষ করে তুলতে।
জীবনের ব্যস্ততা যতই বাড়ুক না কেন, পুরনো বন্ধুদের সাথে দেখা করার সময় বের করা উচিত। কারণ এমন মুহূর্তগুলোই আমাদের জীবনে নতুন উদ্যম, আনন্দ আর অনুপ্রেরণা এনে দেয়।
সময় থেমে ছিল এক বিকেল – মনোহরদীতে ২০১৫ ব্যাচের ছয় বন্ধুর পুনর্মিলনী
বন্ধুত্বের বাঁধন সময় বা দূরত্বে ম্লান হয় না—বরং জীবনের অভিজ্ঞতা ও সাফল্যের সঙ্গে সঙ্গে তা হয়ে ওঠে আরও গভীর। ব্যস্ত জীবনের নানা চাপের মধ্যেও স্কুলজীবনের বন্ধুরা যখন একত্র হয়, তখন সেই মুহূর্তে যেন সময় থমকে দাঁড়ায়। ২০১৫ সালের এক ব্যাচের ছয় বন্ধু দীর্ঘদিন পর মিলিত হলেন মনোহরদীতে, আর সেই দেখা হয়ে উঠল হাসি, গল্প, বৃষ্টি আর ভ্রমণের এক রঙিন কোলাজ।
দিনটি শুরু হয়েছিল ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে। লেখক তখন নানা কাজে নিমগ্ন, এমন সময় আসে ফোন—ওপারে বন্ধু তানভীর, কণ্ঠে উচ্ছ্বাস, “আমরা মনোহরদী আসছি!” তানভীর শুধু একজন বন্ধু নয়, বরং অন্যতম কাছের মানুষ। খবর পেয়ে লেখক আর দেরি করেননি; তাড়াতাড়ি দেখা করতে যান। সেখানে অপেক্ষা করছিল আরও চার পুরনো সঙ্গী—আশিক, তামিম, রাকিব, সোহান। ছয়জন মিলে যেন আবার ফিরে গেলেন সেই স্কুল জীবনের দিনে, যখন প্রতিদিনের শুরু আর শেষ ছিল একসাথে কাটানো হাসি-আনন্দে।
এসএসসি পরীক্ষার পর জীবনের পথ আলাদা হয়ে গিয়েছিল। আশিক, তামিম, সোহান ও তানভীর ভর্তি হয়েছিল আবদুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজে। রাকিব ভর্তি হয় একটি প্রাইভেট কলেজে, আর লেখক ভর্তি হন এম এ মজিদ সায়েন্স কলেজে। সময়ের স্রোতে একে অপরের সঙ্গে দেখা কমে গিয়েছিল, কিন্তু মনে মনে সবাই জানত—এই বন্ধুত্ব অটুট।
পুনর্মিলনের স্থান হিসেবে বেছে নেওয়া হয় এম এ মজিদ সায়েন্স কলেজের প্রাঙ্গণ। পরিচিত গেট, সবুজ মাঠ আর পুরনো ভবন দেখে মনে পড়ে যাচ্ছিল অনেক অজানা-অচেনা স্মৃতি। এখানে দাঁড়িয়ে তারা ক্যামেরাবন্দি হলেন, ঠিক সেই জায়গাতেই যেখানে একসময় স্বপ্ন আঁকা হতো ভবিষ্যতের। গল্প শুরু হয় স্কুল জীবনের দুষ্টুমি, প্রথম ক্লাসের ভয়, পরীক্ষার প্রস্তুতির চাপ, হোস্টেল জীবনের মজার ঘটনা থেকে। কেউ বলছিল কীভাবে রাত জেগে পড়াশোনা করত, কেউ আবার শেয়ার করছিল পড়ার চেয়ে বেশি সময় কিভাবে আড্ডায় কাটত—সব গল্পে ভেসে উঠছিল কিশোর বয়সের সরল হাসি।
এখন সবাই জীবনের ভিন্ন পথে এগিয়ে গেছে। কেউ শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, কেউ ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা দিচ্ছেন, কেউ আবার বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্নে প্রস্তুত হচ্ছেন। জীবনের দায়িত্ব যতই বেড়ে যাক, আজকের দিনে তারা সবাই ছিল নিছকই বন্ধু—কোনো পদবি বা পরিচয়ের বোঝা ছাড়াই।
আড্ডার একপর্যায়ে সিদ্ধান্ত হলো আশপাশের সুন্দর জায়গাগুলো ঘুরে দেখা হবে। মোটরসাইকেলে ছয়জন বেরিয়ে পড়লেন মনোহরদীর আশপাশের গ্রামীণ সৌন্দর্য দেখতে। তারা ঘুরে দেখলেন হাতিরদিয়া, ছোট সুকুন্ধীসহ বেশ কিছু মনোরম স্থান। এর আগে তারা গিয়েছিলেন কাপাসিয়ার খিরাটির জনপ্রিয় আড্ডাস্থল ‘ক্যাফে শীতল হাওয়া’-তে, যার পাশেই রয়েছে ‘গোল্ডেন ক্যাফে’। যদিও সেখানে তোলা কোনো ছবি নেই, তবে স্মৃতিতে সেই সময়টুকু অমলিন হয়ে থাকবে।
কলেজে ফেরার কিছুক্ষণ পরই শুরু হয় এক টানা বৃষ্টি। গাছের পাতায়, মাটিতে আর ছাদের টিনে বৃষ্টির টুপটাপ শব্দ যেন অতীতের সুর বাজাচ্ছিল। সবাই বৃষ্টির শব্দে ডুবে গেলেন স্মৃতিচারণে—হোস্টেল জীবনের মজার মুহূর্ত, পরীক্ষার আগে গোপন টেনশন, পড়াশোনার গুরুত্ব, আর না পড়ার আফসোস নিয়ে চলল দীর্ঘ আলাপ। হাসি-ঠাট্টার মাঝেই উঠে আসছিল জীবন থেকে পাওয়া শিক্ষার কথা—যে শিক্ষা বইয়ের পাতায় নয়, বরং অভিজ্ঞতার ভেতর থেকে আসে।
দিনের শেষ বিকেলে তারা আবারও দাঁড়ালেন কলেজ ভবনের সিঁড়িতে। সূর্য অস্ত যাচ্ছিল, আকাশে জমে থাকা বৃষ্টির মেঘে তৈরি হচ্ছিল অপূর্ব দৃশ্য। সেদিন তোলা ছবিগুলোই হবে তাদের এই পুনর্মিলনের চিরকালীন স্মারক—যেখানে বন্ধুত্বের অটুট বন্ধন আর তারুণ্যের স্মৃতি বন্দি হয়ে থাকবে। সময় হয়তো দ্রুত বয়ে যাবে, কিন্তু মনোহরদীর সেই বিকেল, সেই বৃষ্টি, সেই আড্ডা আর ছয় বন্ধুর অদম্য হাসি কখনোই হারিয়ে যাবে না।