কাপাসিয়া,গাজীপুর প্রতিনিধি : শিক্ষক সমাজ একটি জাতির মেরুদণ্ড। তাদের সম্মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাবে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনবে। সম্প্রতি একটি দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে ঘাগটিয়া চালা জুনিয়র মডেল স্কুলে, যেখানে বিদ্যালয়ের শিক্ষক জনাব তানজিল একটি অনাকাঙ্ক্ষিত হামলার শিকার হয়েছেন।
ঘটনার বিবরণ
গত বুধবার সকালে, যখন শ্রেণিকক্ষে পাঠদান চলছিল, তখন এক নেশাগ্রস্ত ব্যক্তি স্কুলের জানালা দিয়ে উঁকি দিচ্ছিল। এতে শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত কোমলমতি ছাত্রীদের মাঝে অস্বস্তি তৈরি হয়। শিক্ষক তানজিল বিষয়টি লক্ষ্য করে ওই ব্যক্তিকে শৃঙ্খলা বজায় রাখার অনুরোধ করেন এবং স্কুল চলাকালীন সময়ে এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য বলেন।
কিন্তু এ কথা বলার কারণে ওই নেশাগ্রস্ত ব্যক্তি ক্ষিপ্ত হয়ে শিক্ষক তানজিলের মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করে। এতে তার মাথায় গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয় এবং তিনি গুরুতর আহত হন।
শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ ও মানববন্ধন
এই হামলার ঘটনায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে এবং ঘাগটিয়া চালা বাজারে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করে। তারা শিক্ষক তানজিলের উপর এই বর্বর হামলার দ্রুত বিচার ও অপরাধীর শাস্তির দাবি জানায়। শিক্ষার্থীদের মুখে উচ্চারিত হয় বিভিন্ন প্রতিবাদী বাক্য —
- "শিক্ষকের উপর হামলা কেন? বিচার চাই, বিচার চাই!"
- "শিক্ষকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে!"
- "একজন শিক্ষকের সম্মান রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব!"
চিকিৎসা ও বর্তমান অবস্থা
স্কুলের স্টাফরা শিক্ষক তানজিলকে দ্রুত চালা বাজারের একটি চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যায়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে বাড়িতে পাঠানো হয়, যেখানে তিনি বর্তমানে বিশ্রামে রয়েছেন। তবে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্যত্র নেওয়া হতে পারে।
শিক্ষকের নিরাপত্তা ও করণীয়
এ ধরনের ঘটনা দেশের শিক্ষাব্যবস্থার জন্য একটি অশনি সংকেত। একজন শিক্ষক তার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যদি হামলার শিকার হন, তবে ভবিষ্যতে অন্য শিক্ষকরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবেন। তাই—
- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
- অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এমন ন্যক্কারজনক কাজ করতে সাহস না পায়।
- বিদ্যালয় ও তার আশেপাশে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে, যাতে যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা সহজেই শনাক্ত করা যায়।
- শিক্ষকদের সুরক্ষায় অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয় জনগণের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা যেতে পারে।
শিক্ষকের সম্মান রক্ষা করা আমাদের সামাজিক ও নৈতিক দায়িত্ব। যদি শিক্ষকরা নিরাপদ না থাকেন, তাহলে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। তাই এ ধরনের ঘটনা রোধে সবার আরও সচেতন ও সোচ্চার হওয়া জরুরি।