মতামত – তৌফিক সুলতান
শুভকামনা রইলো। মু. সালাহউদ্দিন আইউবীর অঙ্গীকারগুলো সত্যিই প্রশংসনীয় এবং অত্যন্ত অনুপ্রেরণামূলক। সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, কাপাসিয়ায় বেকারত্ব দূরীকরণ এবং যুবসমাজকে কল্যাণমূলক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করার জন্য তিনি যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন, তা কেবল নির্বাচনী অঙ্গীকারের সীমার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং এটি সমাজের প্রকৃত উন্নয়ন, স্থানীয় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করার দিকে একটি সুসংগঠিত ও সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ।
কাপাসিয়া, গাজীপুর-৪ আসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা, দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এখানে বেকারত্ব, নিরাপত্তাহীনতা, নারীর নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্যা, স্বাস্থ্যসেবার ঘাটতি এবং অবকাঠামোগত দুর্বলতা—এসব সমস্যা সাধারণ মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করছে। এমন অবস্থায় যদি একজন নীতিনির্ধারক এমন অঙ্গীকার দেন যা সবমিলিয়ে সমগ্র এলাকার মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করতে পারে, তবে তা কেবল ভোটের সীমার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। এটি এলাকার সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নের একটি বাস্তব এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দেখা উচিত।
কৃষি উন্নয়ন ও কৃষক সুরক্ষা:
মু. সালাহউদ্দিন আইউবী কৃষক সম্প্রদায়ের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ও সেবা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করেছেন। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতি মূলত কৃষির উপর নির্ভরশীল, এবং কাপাসিয়াও তার ব্যতিক্রম নয়। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য সংরক্ষণে অসুবিধার মুখোমুখি হন। আধুনিক সংরক্ষণ ব্যবস্থা, যেমন কোল্ড স্টোরেজ, সঠিক বাজারজাতকরণ এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করা হলে কৃষকের আয় বাড়বে, বর্জ্য কমবে এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। এটি শুধু কৃষককে সশক্ত করবে না, বরং সমগ্র এলাকার অর্থনীতিকেও শক্তিশালী করবে।
কৃষি উন্নয়নের পাশাপাশি বাজারে সমন্বিত সহযোগিতা ও সমর্থন প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করলে স্থানীয় কৃষি পণ্য আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছানোর সুযোগ পাবে। এতে কাপাসিয়ার কৃষকরা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠবে, যা এলাকার অর্থনৈতিক দৃঢ়তা বৃদ্ধি করবে।
সমাজে ন্যায় ও সমতা প্রতিষ্ঠা:
মু. সালাহউদ্দিন আইউবী অমুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য সমান নাগরিক সুবিধা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করেছেন। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ একটি সমাজের স্থায়িত্ব ও শান্তি নির্ভর করে নাগরিকদের মধ্যে সমতার অনুভূতির উপর। যখন সমাজের সমস্ত মানুষ নিরাপদ এবং সমানাধিকার পায়, তখন তারা সক্রিয়ভাবে সমাজের উন্নয়নে অবদান রাখতে সক্ষম হয়।
নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ধর্ষণ ও নারীর প্রতি নির্যাতনের ক্ষেত্রে ফ্রি আইনি সহায়তা প্রদান করা একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। নারীর নিরাপত্তা এবং আইনের শাসনের প্রতি জনগণের আস্থা বৃদ্ধির মাধ্যমে সমাজে ন্যায়বিচারের প্রক্রিয়া আরও কার্যকর হবে। নারীর ক্ষমতায়ন এবং তাদের সমাজে সক্রিয় ভূমিকা নিশ্চিত করলে যুব ও মহিলা শক্তির সমন্বিত বিকাশ হবে।
স্বাস্থ্যসেবা ও জনসেবা:
কাপাসিয়ার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের দৈন্যদশা দূর করার অঙ্গীকার একটি অত্যন্ত প্রশংসনীয় পদক্ষেপ। জনগণ প্রায়শই প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার ঘাটতির কারণে সমস্যার সম্মুখীন হন। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা মানে শুধু রোগ নিরাময় নয়, বরং সুস্থ, সক্ষম এবং উৎপাদনশীল সমাজ গঠন করা। উন্নত স্বাস্থ্যসেবা, পর্যাপ্ত ও প্রশিক্ষিত চিকিৎসক, আধুনিক যন্ত্রপাতি এবং জরুরি পরিষেবার সঠিক প্রণালী বাস্তবায়ন করলে মানুষের জীবনযাত্রার মান উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হবে।
স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নের পাশাপাশি প্রয়োজন স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি। জনগণকে সঠিক তথ্য প্রদান, প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সচেতন কার্যক্রমের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য ও সুস্থতার নিশ্চয়তা নিশ্চিত করা সম্ভব। এটি বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক এবং নারী জনগোষ্ঠীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
বিদেশগামী প্রবাসী ও যুবসমাজের কল্যাণ:
বিদেশগামী ভাই-বোনদের জন্য বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ প্রদান এবং দালালদের হয়রানি থেকে রক্ষা করার উদ্যোগ অত্যন্ত সময়োপযোগী। বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি বড় অংশ প্রবাসী মানুষের পাঠানো রেমিট্যান্সের উপর নির্ভরশীল। প্রবাসীদের সুরক্ষা, তথ্য এবং দক্ষতা উন্নয়নের সুযোগ প্রদান করলে তাদের আয় বৃদ্ধি পাবে এবং তারা আরও নিরাপদে ও সুবিন্যস্তভাবে বিদেশে অবস্থান করতে পারবে।
তাছাড়া, যুবসমাজের জন্য বিনামূল্যে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির উদ্যোগ তাদের আত্মনির্ভর ও সৃজনশীল করে তুলবে। এই ধরনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি কেবল তাদের জীবিকাগত সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে না, বরং স্থানীয় অর্থনীতিতে নতুন উদ্যোগ, স্টার্টআপ এবং সামাজিক উদ্ভাবনও জন্ম দেবে।
সুরক্ষা ও আইনশৃঙ্খলা:
চুরি, দখলবাজি, মাদক, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজমুক্ত কাপাসিয়ার অঙ্গীকার একটি সুদূরপ্রসারী নীতি নির্দেশ করে। নিরাপদ পরিবেশের মাধ্যমে মানুষ তাদের জীবন, সম্পদ এবং ব্যবসায়িক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারবে। একটি শান্তিপ্রিয় ও সুরক্ষিত সমাজ যুবশক্তিকে তাদের সময়, শক্তি এবং সৃজনশীলতা সমাজকল্যাণমূলক কাজে নিয়োজিত করার সুযোগ দেয়।
পর্যটন ও ক্রীড়া:
কাপাসিয়ায় আধুনিক মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ এবং পর্যটনবান্ধব নগরী গড়ার উদ্যোগ একদিকে যুবসমাজকে খেলাধুলার মাধ্যমে শৃঙ্খলাবদ্ধ করবে, অন্যদিকে পর্যটন শিল্পের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে। পর্যটন নগরী হিসেবে কাপাসিয়ার গড়ন স্থানীয় সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে সংরক্ষণে সহায়ক হবে। পর্যটন ও ক্রীড়া পরিকাঠামো যুবদের শৃঙ্খলাবদ্ধ, সক্রিয় এবং সমাজে সৃজনশীল অবদান রাখার পথ খুলে দেবে।
বাধ্যতামূলক সেনা প্রশিক্ষণ:
কাপাসিয়ার সকল নাগরিকের জন্য বাধ্যতামূলক সেনা প্রশিক্ষণ প্রবর্তনের পরিকল্পনা সমাজে দায়িত্ববোধ, শৃঙ্খলা এবং নেতৃত্ব বিকাশে সহায়ক হবে। এটি যুবশক্তিকে আরও সংগঠিত, সাহসী এবং দেশের প্রতি দায়বদ্ধ করবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সুরক্ষা সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ এবং সামাজিক অস্থিরতার সময় এই প্রশিক্ষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হিসেবে কাজ করবে।
সমাজের প্রকৃত উন্নয়ন ও একত্রিত উদ্যোগ:
যুবসমাজকে একত্রিত করে কল্যাণমূলক কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসা—যেমন উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, স্থানীয় উদ্যোগ ও স্বাস্থ্যসেবা—সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে। এটি মানুষের মধ্যে সমবায় এবং সহযোগিতার সংস্কৃতি বৃদ্ধি করবে। পাশাপাশি, জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে সমাজে ন্যায়বিচার, অর্থনৈতিক সমতা এবং সামাজিক সংহতি নিশ্চিত করা সম্ভব।
আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, মু. সালাহউদ্দিন আইউবীর এই পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়িত হলে কাপাসিয়া একটি সমৃদ্ধ, সুশৃঙ্খল এবং কল্যাণমুখী নগরীতে রূপান্তরিত হবে। সমাজে ন্যায়বিচার, অর্থনৈতিক সমতা, যুব শক্তির দক্ষ ব্যবহার, নিরাপদ পরিবেশ এবং সামাজিক সংহতি—এসব মিলিতভাবে কাপাসিয়াকে প্রকৃত অর্থে উন্নয়নের পথ দেখাবে।


.jpeg)























