শাক-সবজি ও ফলমূলে থাকা কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ দূর করতে সচেতন হোন: স্বাস্থ্যই হোক প্রথম অগ্রাধিকার - তৌফিক সুলতান
বর্তমান সময়ে অধিক ফসল উৎপাদনের প্রতিযোগিতায় কৃষকেরা অনেক ক্ষেত্রেই মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করে থাকেন। ফলে বাজারে পাওয়া শাক-সবজি ও ফলমূলে প্রায়শই ক্ষতিকর রাসায়নিক অবশিষ্টাংশ থেকে যায়, যা দীর্ঘমেয়াদে মানবদেহে ক্যানসার, কিডনি রোগ, হরমোনজনিত সমস্যা, শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। এসব মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে বাঁচতে আমাদের ঘরোয়া পর্যায়ে কিছু সচেতন পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজার থেকে আনা শাক-সবজি ও ফলমূল সরাসরি রান্না বা খাওয়ার আগে ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করা জরুরি। শুধু পানিতে ধোয়ার পাশাপাশি, এগুলোকে কিছুক্ষণ বিশেষ দ্রবণে ভিজিয়ে রাখলে অধিকাংশ কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ সহজে দূর করা সম্ভব। এর জন্য ৫% সিরকা (ভিনেগার) বা ২% লবণের দ্রবণ তৈরি করে শাক-সবজি ও ফলমূল ১৫ থেকে ৩০ মিনিট পর্যন্ত ভিজিয়ে রাখতে হবে। পরে আবার পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নিতে হবে। এই প্রক্রিয়া সহজ, সাশ্রয়ী এবং কার্যকর – যা বাড়িতে সহজেই প্রয়োগ করা যায়। যারা সিরকা বা লবণ ব্যবহার করতে চান না, তারা শুধু স্বাভাবিক পানিতেই ৩০ মিনিট রেখে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে পারেন।
এছাড়াও, ফলের খোসা ছাড়িয়ে খাওয়া, রান্নার আগে সবজি সিদ্ধ করে নেয়া বা সেদ্ধ পানি ফেলে দেয়া – এসব পদ্ধতিও অতিরিক্ত রাসায়নিক দূর করতে সহায়ক। তবে সবচেয়ে উত্তম সমাধান হচ্ছে অর্গানিক (জৈব) উপায়ে উৎপাদিত শাক-সবজি ও ফলমূল বেছে নেয়া এবং বিশ্বস্ত উৎস থেকে খাদ্য কেনা। প্রয়োজনে নিজে ছাদে বা বারান্দায় অল্প পরিসরে জৈব উপায়ে শাকসবজি উৎপাদনের অভ্যাস গড়ে তোলা যেতে পারে।
জনস্বাস্থ্য রক্ষায় সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায়েও সচেতনতা তৈরি করা অত্যন্ত প্রয়োজন। পরিবার, সমাজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে খাদ্য নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ে নিয়মিত আলোচনা এবং প্রশিক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। কারণ, একজন সচেতন ভোক্তা হিসেবে নিজের ও পরিবারের নিরাপদ খাদ্য গ্রহণ নিশ্চিত করাই হতে পারে একটি সুস্থ জাতি গঠনের প্রথম পদক্ষেপ।