প্রবন্ধ লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
প্রবন্ধ লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

স্বাধীন বাংলাদেশ

স্বাধীন বাংলাদেশ

Welftion Love Of Welfare  

      

 

Towfiq Sultan24

বাংলাদেশ ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন হলেও বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীন হতে পারে নি। বাংলাদেশের মানুষ সেই দুইশত বছর আগে থেকে যেমন গোলাম ছিল সেই গোলাম ই রয়ে গেছিল। কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট এসে স্বৈরাচারী শাসন হতে মুক্ত হয়ে বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীন হয়েছে। দেশ স্বাধীন হওয়া আর মানুষ স্বাধীন হওয়া এক কথা নয়। যে দেশ স্বাধীন অথচ দেশের মানুষ গুলো স্বাধীন নয়,সেই স্বাধীনতার কোনো মূল‍্য নেই। সে স্বাধীনতা ভিত্তিহীন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশের মানুষ যে স্বাধীনতা পেয়েছিল,সেই স্বাধীনতা তো বাংলাদেশের মানুষ চাই নি। বাংলার সন্তানেরা সেই স্বাধীনতার জন‍্য তো যুদ্ধ করেনি। ত্রিশ লক্ষ তাজা প্রাণ ও হাজার হাজার মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে যে দেশ স্বাধীন করেছিল সেই দেশ তো দেশের মানুষ পাইনি । না’ই যদি চাই তাহলে বাংলাদেশের মানুষের কথা বলার অধিকার, স্বাধীন ভাবে চলাফেরার অধিকারসহ বাংলাদেশের সংবিধানে যে সব মৌলিক অধিকারের কথা বলা হয়েছে সেগুলোও পযর্ন্ত কেন কেড়ে নেওয়া হয়েছিল? সবকিছু থাকার পরও দেশের কিছু অন্ধ, বধির মানুষ ছিল তারা বলত শেখ হাসিনা আর যাই করুক, দেশের জন্য অনেক কাজ করেছে। করেছে তো গত ১৬ বছরে পাচার হইছে ৯৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আর বাংলাদেশের বর্তমান ঋণ ৯৯.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশের মানুষ এমন দেশই চেয়েছিল বুঝি? তাই তো শিল্পীরা গানের সুরে গেয়ে যান- এমন দেশটি কোথাও খোঁজে পাবে না'কো তুমি, সকল দেশের রানী সেজে সেই যে আমার জন্মভূমি। এমন দেশ আসলেই কোথাও খোঁজে পাওয়া যাবে?


দেশের দুইটি প্রধান পরিবার জিয়া পরিবার ও শেখ পরিবার দেশের মানুষকে এই বাংলাদেশকে শাসন করতে গিয়ে দেশের মানুষকে যেভাবে শোষণ, নির্যাতন ও অত‍্যাচার করে স্বাধীন দেশের মানুষের স্বাধীনতা হরণ করেছে। দেশের মুক্তিযোদ্ধারা তার পরবর্তী বংশধরের ওপর দেশের মানুষই এমন অত‍্যাচার,নির্যাতন করবে জানলে কখনো এই দেশ স্বাধীন করতেন না। আরেক স্বৈরশাসক এরশাদের কথা না’ই বললাম সেটা তো দেশের মানুষ স্বচক্ষে দেখেছে। বাংলাদেশ সাংবিধানিক ভাবে গণতান্ত্রিক দেশ এবং গণতান্ত্রিক দেশে সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ হলেও আমাদের বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জনগণ কখনো ক্ষমতার মালিক হতে পারে নি। বরং বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশের দুইটি প্রধান বংশ শেখ বংশ  ও জিয়া বংশ গণতান্ত্রিক দেশে যেন বংশতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশ শাসন করেছিল। যেখানে জনগণকে গোলাম বানিয়ে মিশ্র অর্থ ব‍্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশের সমস্ত সম্পদ বিশ ভাগ মানুষের হাতে চলে যায়। সম্পদের এমন অসম বন্টনের ফলে ধনীরা আরো ধনী হতে থাকেন আর গরীবরা আরো গরীব হয়ে দেশের উন্নতি তে  বাধা সৃষ্টি করার মাধ্যমে দেশের মধ্যে ধনী, গরীব ভেদাভেদ সৃষ্টি করেছেন। দেশের অনেক মানুষ তার দৈনন্দিন যে নূন্যতম ক‍্যালরি পরিমাণ খাবার খাওয়া উচিত সে পরিমাণ খাবারও খেতে পারে নি। দেশে কিছু মানুষ দুর্নীতি করে  সম্পদশালী হয়ে বিদেশে বসবাস শুরু করে দিয়েছে। এমন স্বাধীন দেশ তো বাংলাদেশের মানুষ চাইনি। বাংলাদেশের মানুষ চেয়েছিল সবাই কাধে কাধ মিলিয়ে পরস্পরের সহযোগী হয়ে মিলেমিশে বাঁচতে কিন্তু স্বাধীনতার তিপ্পান্ন বছর পরও দেশের মানুষ স্বাধীনতাকে খোঁজে বেড়ায়। আজ দেশের স্বাধীনতা ও দেশের মানুষের স্বাধীনতা দুটোই পেয়েছি। কিন্তু সেটা ধরে রাখার জন‍্য দেশের সমস্ত মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন। যে দেশ তিপ্পান্ন বছর  আগে স্বাধীন হয়েছে সেই দেশের মানুষের স্বাধীনতাও নিশ্চিত করা হোক। দেশের স্বাধীনতার পাশাপাশি দেশের মানুষের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন‍্য কিছু বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। যেমন-

১) প্রত‍্যেক শ্রেণিতে ধর্মীয় শিক্ষার ব‍্যবস্থা করতে হবে। কারণ যে নিজের ধর্মকে চিনেছে, সত্যিকার অর্থে জেনেছে সে কখনো অন‍্য ধর্মের প্রতি বিদ্বেষ ভাব পোষণ করবে না কিংবা কেউ কারো ধর্মকে ছোট করবে না। এতে দেশ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে।

২) দেশের প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

৩) অন‍্যায়কে কঠোর হাতে দমনের জন‍্য শুধু আইন লিপিবদ্ধ করলে হবে না তার সঠিক প্রয়োগ করতে হবে।

৪) দেশের প্রত‍্যেক নাগরিক একেই সমান বলে বিবেচিত হবে। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন নাগরিক ছাড়া কেউ যেন অতিরিক্ত সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে না পারে সেই দিকে দৃষ্টি রাখতে হবে।

৫) দেশের প্রতিটি কাজে জনগনকে অযথা হয়রানি বন্ধ নিশ্চিত করতে হবে।

৬) দেশের প্রতিটি নাগরিক যেন দেশপ্রেমিক হয়ে গড়ে ওঠে,দেশ বিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকে সেই জন‍্য উপযুক্ত ব‍্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৭) দেশের মধ্যে সুনাগরিক ও দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার জন‍্য দেশের মধ্যে উপযুক্ত কারিগরি শিক্ষা ও উচ্চ শিক্ষার ব‍্যবস্থা করতে হবে। বিদেশে পড়তে যাওয়া মেধাবী শিক্ষার্থীদের দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে।

৮) দেশের টাকা যাতে পাচার না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

৯) দেশের টাকা খরচের জবাবদিহিতা থাকতে হবে।



শিক্ষার্থী,ইয়াছিন আরাফাত 

কবি ও গল্পকার।

অর্থনীতি বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

উপ-দপ্তর সম্পাদক, বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।

 

সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

ইসলাম বিশ্বাসের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে মানবতা ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা

ইসলাম বিশ্বাসের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে মানবতা ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা

ইসলাম বিশ্বাসের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে মানবতা ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা। কুরআন, হাদীস এবং নবী করিম (স.) এর জীবনচরিত আমাদের শাসন, বিচার ও সমাজ ব্যবস্থার নীতি ও আদর্শের মুলসূত্র। খিলাফত শাসনব্যবস্থা, যা ইসলামের আদর্শ শাসনব্যবস্থার প্রকাশ রূপ হিসেবে বিবেচিত, তা ছিল এমন এক সমাজের মডেল যেখানে ন্যায়, দায়িত্ব, সামাজিক সমতা ও মানবিক মূল্যবোধগুলোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হতো। ঐতিহাসিকভাবে, ইসলামের প্রাথমিক যুগে—হযরত মুহাম্মদ (স.) এর আমন্ত্রণ থেকে শুরু করে প্রথম চার খলিফা (রাশদা খলিফা) পর্যন্ত—এই আদর্শ শাসনব্যবস্থার প্রাথমিক রূপ ফুটে উঠেছিল।




২. ইসলামী শাসনব্যবস্থার আদর্শমূল নীতিমালা

(ক) আল্লাহর একত্ব ও নবীর নির্দেশনা

খিলাফতের মূল ভিত্তি হলো আল্লাহর একত্ব এবং নবী করিম (স.) এর নির্দেশনায় প্রতিষ্ঠিত আদর্শ।

  • কুরআনের নির্দেশনা: ন্যায়, সদিচ্ছা, সহানুভূতি ও দায়িত্বশীল শাসনের আদর্শ কুরআনে প্রচুরভাবে উল্লেখ আছে।
  • সুন্নাহ ও হাদীস: নবী করিম (স.) এর জীবনচরিত ও বাণী শাসকের নৈতিকতা, বিচার ও সমাজব্যবস্থার মডেল হিসেবে বিবেচিত।

(খ) শুরা ও দায়িত্ববোধ

খিলাফতের অন্যতম মূল নীতি হলো শুরা, অর্থাৎ পরামর্শ ও মতবিনিময়।

  • পরামর্শদাতা মণ্ডলী: শাসকের কাছাকাছি ছিল এমন বিজ্ঞ ও নৈতিক ব্যক্তিদের সমিতি, যারা নীতি ও ন্যায়বিচারে সহায়তা করতেন।
  • জনগণের অংশগ্রহণ: সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের মতামত ও প্রয়োজন বিবেচনা করা হতো, যাতে শাসন ব্যবস্থা সর্বজনীন ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে পারে।

(গ) ন্যায় ও বিচার

ইসলামী শাসনে বিচারব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ।

  • শারীয়াহ আইন: বিচার ও প্রশাসনের ক্ষেত্রে কুরআনের বিধান, হাদীস এবং ইজমা (উম্মাহর ঐক্যবদ্ধ মত) মেনে চলা হতো।
  • ন্যায়বিচারের স্বতন্ত্রতা: ধর্মীয় ও সামাজিক ন্যায়ের স্থাপনার জন্য বিচারকদের স্বতন্ত্রতা নিশ্চিত করা হতো, যাতে কোনো পক্ষপাতিত্ব না দেখা দেয়।

(ঘ) সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়

খিলাফতের আদর্শে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমতা ও ন্যায়ের গুরুত্ব স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়।

  • জাকাত ও খয়েরান: সম্পদের নির্দিষ্ট অংশ দরিদ্র ও প্রয়োজনীয় মানুষের সহায়তায় ব্যয় করা হতো।
  • সামাজিক দায়িত্ব: শাসকের উপর ছিল জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করার, অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করার ও সমাজের দুর্বলদের সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব।

৩. ঐতিহাসিক খিলাফতের ঝলক

(ক) রাশদা খলিফা যুগ

হযরত আবু বকর, ওমর, উসমান ও আলী (রাঃ) এর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত এই যুগটি ছিল আদর্শ ও সরল শাসনের মডেল।

  • সামাজিক সমতা ও মানবিকতা: সকল মানুষের মধ্যে সমতা ও সহযোগিতার বাণী প্রাধান্য পেয়েছিল।
  • দ্বন্দ্ব মোকাবিলায় ন্যায়বিচার: ধর্মীয় ও সামাজিক দ্বন্দ্ব মোকাবিলায় পরামর্শের মাধ্যমে সমাধানের পথ খোঁজা হতো।

(খ) উমায়্যদ ও আব্বাসিদ শাসন

পরবর্তী খিলাফতগুলিতে শাসনব্যবস্থায় প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর প্রসার ঘটেছিল।

  • বৃহত্তর প্রশাসনিক কাঠামো: বিভিন্ন প্রশাসনিক বিভাগ, জিল্লা ও আমলদের নিয়োগের মাধ্যমে শাসনকে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় স্তরে ভাগ করে কার্যকর পরিচালনা করা হতো।
  • সাংস্কৃতিক ও বৈজ্ঞানিক উত্থান: এই সময়ে বিজ্ঞান, শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে ব্যাপক অগ্রগতি ঘটেছিল, যা শাসন ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও উদারতার পরিচায়ক।

৪. খিলাফত শাসনব্যবস্থার কাঠামো ও নীতি

(ক) খলিফা ও শাসনের কেন্দ্রীয়ত্ব

খলিফা ছিলেন শুধু রাজনৈতিক নেতা নন, বরং ধর্মীয় ও সামাজিক নেতা হিসাবেও বিবেচিত।

  • নৈতিক ও প্রশাসনিক নেতৃত্ব: খলিফার কাছে ছিল সর্বোচ্চ দায়িত্ব – মানুষের ন্যায় প্রতিষ্ঠা, সমাজের কল্যাণ ও ইসলামের আদর্শ রক্ষা করা।
  • উপদেষ্টা পরিষদ: খলিফার নিকট ছিলেন বিভিন্ন বিভাগে দক্ষ ও সতর্ক ব্যক্তিবর্গ, যারা নীতি নির্ধারণ ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে সহায়ক ভূমিকা পালন করতেন।

(খ) শুরা (পরামর্শ) প্রথা

  • নির্বাচনী উপাদান: শুরা পদ্ধতির মাধ্যমে শাসন ব্যবস্থায় জনগণের অংশগ্রহণ ও মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হতো।
  • দায়িত্ব ও পরামর্শ: শাসনের কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে পরামর্শদাতা পরিষদের মতামতকে বিবেচনা করা হতো, যা শাসনের স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা প্রদান করতো।

(গ) আইন ও শাস্তির আধিপত্য

  • শারীয়াহ আইন: বিচার ও প্রশাসনের মূল ভিত্তি হিসেবে শারীয়াহ ব্যবহৃত হতো, যা নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধের সাথে সমন্বিত ছিল।
  • ন্যায়বিচার ও শাস্তি: অপরাধ ও অন্যান্য সামাজিক সমস্যার সমাধানে ন্যায়বিচার পদ্ধতি ছিল নিরপেক্ষ ও সকলের জন্য সমান।

(ঘ) অর্থনৈতিক নীতি ও সামাজিক সুস্থতা

  • ধনী-দরিদ্রের ভারসাম্য: জাকাত, খয়েরান ও অন্যান্য ইসলামী নীতির মাধ্যমে সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টন নিশ্চিত করা হতো।
  • সামাজিক নিরাপত্তা: অসহায়, দরিদ্র ও অন্যান্য অসহায় শ্রেণির মানুষের প্রতি সমাজ ও শাসনের বিশেষ মনোযোগ থাকত, যা সামাজিক ঐক্য ও স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য ছিল।

৫. খিলাফতের আদর্শ ও আধুনিক প্রেক্ষাপট

আজকের বিশ্বে রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থার প্রয়োজনে খিলাফতের ঐতিহ্য ও আদর্শ নিয়ে বিভিন্ন বিতর্ক ও আলোচনা বিদ্যমান। ঐতিহাসিক খিলাফত যেমন এক ঐক্যবদ্ধ সমাজ ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার মডেল ছিল, তেমনি সমকালীন সমাজে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও বাস্তবতার মোকাবিলায় এর প্রয়োগ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

(ক) আদর্শিক মূল্যবোধ ও বাস্তব প্রয়োগের দিক

  • নৈতিকতা ও সামাজিক ন্যায়: ইসলামী শাসনের নীতিগুলো—যেমন ন্যায়, পরামর্শ, ও সামাজিক সমতা—আজকের দুনিয়াতেও প্রাসঙ্গিক।
  • সামগ্রিক কল্যাণের ধারণা: সমাজের সকল স্তরের মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করার উদ্যোগ, যা ঐতিহাসিক খিলাফতে প্রবল ছিল, তা সমসাময়িক ন্যায় ও মানবাধিকার সংরক্ষণে গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

(খ) আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার সাথে সমন্বয়

  • বহুপক্ষীয় ও लोकतান্ত্রিক কাঠামো: ঐতিহাসিক খিলাফতের আদর্শ ও নীতি আধুনিক রাজনৈতিক ব্যবস্থার সাথে সরাসরি মিল পাওয়া কঠিন হলেও, ন্যায়, সততা, ও সামাজিক ভারসাম্যের মতো নীতিগুলোকে আজকের প্রশাসনিক কাঠামোতেও অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
  • আইন ও বিচার ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা: ইসলামী বিচারব্যবস্থার নীতি—যেখানে ন্যায়বিচার ও শাস্তি প্রদান করা হতো—আধুনিক আইনব্যবস্থার উন্নয়নে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজে লাগতে পারে।

(গ) চ্যালেঞ্জ ও সমালোচনা

  • সাংস্কৃতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট: ঐতিহাসিক খিলাফতের প্রেক্ষাপট ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক বাস্তবতা আজকের বহুমাত্রিক সমাজে প্রয়োগের ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
  • আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার: সমসাময়িক রাষ্ট্রব্যবস্থায়, যেখানে মানবাধিকার ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়, ঐতিহাসিক শাসনব্যবস্থার কিছু নীতির পুনর্বিবেচনা প্রয়োজন।














খিলাফত শাসনব্যবস্থা ইসলামী আদর্শের এক উজ্জ্বল প্রকাশ। এটি ছিল এমন এক মডেল, যেখানে ধর্মীয়, নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধগুলোকে সর্বোচ্চ স্থান দেওয়া হতো। প্রাথমিক যুগের রাশদা খলিফাদের শাসনে যে ন্যায়, পরামর্শ ও সমতা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, তা আজকের সমাজে নৈতিক ও মানবিক আদর্শ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। তবে, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও আধুনিক সমাজের বাস্তবতা বিবেচনা করে, এর কিছু নীতি পুনর্বিবেচনা ও আধুনিকীকরণের প্রয়োজন রয়েছে।

এই প্রবন্ধের মাধ্যমে আমরা দেখতে পাই যে, খিলাফতের শাসনব্যবস্থার মূল লক্ষ্য ছিল মানব কল্যাণ, ন্যায়বিচার ও সামাজিক সমতা প্রতিষ্ঠা করা। যদিও সমসাময়িক বিশ্বে রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতা পরিবর্তিত হয়েছে, তবু ঐতিহাসিক আদর্শগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা আরও ন্যায়সঙ্গত, মানবিক ও সহযোগিতামূলক সমাজ গড়ে তোলার চেষ্টা করতে পারি।