বাংলাদেশ ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন হলেও বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীন হতে পারে নি। বাংলাদেশের মানুষ সেই দুইশত বছর আগে থেকে যেমন গোলাম ছিল সেই গোলাম ই রয়ে গেছিল। কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট এসে স্বৈরাচারী শাসন হতে মুক্ত হয়ে বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীন হয়েছে। দেশ স্বাধীন হওয়া আর মানুষ স্বাধীন হওয়া এক কথা নয়। যে দেশ স্বাধীন অথচ দেশের মানুষ গুলো স্বাধীন নয়,সেই স্বাধীনতার কোনো মূল্য নেই। সে স্বাধীনতা ভিত্তিহীন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশের মানুষ যে স্বাধীনতা পেয়েছিল,সেই স্বাধীনতা তো বাংলাদেশের মানুষ চাই নি। বাংলার সন্তানেরা সেই স্বাধীনতার জন্য তো যুদ্ধ করেনি। ত্রিশ লক্ষ তাজা প্রাণ ও হাজার হাজার মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে যে দেশ স্বাধীন করেছিল সেই দেশ তো দেশের মানুষ পাইনি । না’ই যদি চাই তাহলে বাংলাদেশের মানুষের কথা বলার অধিকার, স্বাধীন ভাবে চলাফেরার অধিকারসহ বাংলাদেশের সংবিধানে যে সব মৌলিক অধিকারের কথা বলা হয়েছে সেগুলোও পযর্ন্ত কেন কেড়ে নেওয়া হয়েছিল? সবকিছু থাকার পরও দেশের কিছু অন্ধ, বধির মানুষ ছিল তারা বলত শেখ হাসিনা আর যাই করুক, দেশের জন্য অনেক কাজ করেছে। করেছে তো গত ১৬ বছরে পাচার হইছে ৯৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আর বাংলাদেশের বর্তমান ঋণ ৯৯.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশের মানুষ এমন দেশই চেয়েছিল বুঝি? তাই তো শিল্পীরা গানের সুরে গেয়ে যান- এমন দেশটি কোথাও খোঁজে পাবে না'কো তুমি, সকল দেশের রানী সেজে সেই যে আমার জন্মভূমি। এমন দেশ আসলেই কোথাও খোঁজে পাওয়া যাবে?
দেশের দুইটি প্রধান পরিবার জিয়া পরিবার ও শেখ পরিবার দেশের মানুষকে এই বাংলাদেশকে শাসন করতে গিয়ে দেশের মানুষকে যেভাবে শোষণ, নির্যাতন ও অত্যাচার করে স্বাধীন দেশের মানুষের স্বাধীনতা হরণ করেছে। দেশের মুক্তিযোদ্ধারা তার পরবর্তী বংশধরের ওপর দেশের মানুষই এমন অত্যাচার,নির্যাতন করবে জানলে কখনো এই দেশ স্বাধীন করতেন না। আরেক স্বৈরশাসক এরশাদের কথা না’ই বললাম সেটা তো দেশের মানুষ স্বচক্ষে দেখেছে। বাংলাদেশ সাংবিধানিক ভাবে গণতান্ত্রিক দেশ এবং গণতান্ত্রিক দেশে সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ হলেও আমাদের বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জনগণ কখনো ক্ষমতার মালিক হতে পারে নি। বরং বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশের দুইটি প্রধান বংশ শেখ বংশ ও জিয়া বংশ গণতান্ত্রিক দেশে যেন বংশতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশ শাসন করেছিল। যেখানে জনগণকে গোলাম বানিয়ে মিশ্র অর্থ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশের সমস্ত সম্পদ বিশ ভাগ মানুষের হাতে চলে যায়। সম্পদের এমন অসম বন্টনের ফলে ধনীরা আরো ধনী হতে থাকেন আর গরীবরা আরো গরীব হয়ে দেশের উন্নতি তে বাধা সৃষ্টি করার মাধ্যমে দেশের মধ্যে ধনী, গরীব ভেদাভেদ সৃষ্টি করেছেন। দেশের অনেক মানুষ তার দৈনন্দিন যে নূন্যতম ক্যালরি পরিমাণ খাবার খাওয়া উচিত সে পরিমাণ খাবারও খেতে পারে নি। দেশে কিছু মানুষ দুর্নীতি করে সম্পদশালী হয়ে বিদেশে বসবাস শুরু করে দিয়েছে। এমন স্বাধীন দেশ তো বাংলাদেশের মানুষ চাইনি। বাংলাদেশের মানুষ চেয়েছিল সবাই কাধে কাধ মিলিয়ে পরস্পরের সহযোগী হয়ে মিলেমিশে বাঁচতে কিন্তু স্বাধীনতার তিপ্পান্ন বছর পরও দেশের মানুষ স্বাধীনতাকে খোঁজে বেড়ায়। আজ দেশের স্বাধীনতা ও দেশের মানুষের স্বাধীনতা দুটোই পেয়েছি। কিন্তু সেটা ধরে রাখার জন্য দেশের সমস্ত মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন। যে দেশ তিপ্পান্ন বছর আগে স্বাধীন হয়েছে সেই দেশের মানুষের স্বাধীনতাও নিশ্চিত করা হোক। দেশের স্বাধীনতার পাশাপাশি দেশের মানুষের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য কিছু বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। যেমন-
১) প্রত্যেক শ্রেণিতে ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ যে নিজের ধর্মকে চিনেছে, সত্যিকার অর্থে জেনেছে সে কখনো অন্য ধর্মের প্রতি বিদ্বেষ ভাব পোষণ করবে না কিংবা কেউ কারো ধর্মকে ছোট করবে না। এতে দেশ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে।
২) দেশের প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
৩) অন্যায়কে কঠোর হাতে দমনের জন্য শুধু আইন লিপিবদ্ধ করলে হবে না তার সঠিক প্রয়োগ করতে হবে।
৪) দেশের প্রত্যেক নাগরিক একেই সমান বলে বিবেচিত হবে। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন নাগরিক ছাড়া কেউ যেন অতিরিক্ত সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে না পারে সেই দিকে দৃষ্টি রাখতে হবে।
৫) দেশের প্রতিটি কাজে জনগনকে অযথা হয়রানি বন্ধ নিশ্চিত করতে হবে।
৬) দেশের প্রতিটি নাগরিক যেন দেশপ্রেমিক হয়ে গড়ে ওঠে,দেশ বিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকে সেই জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৭) দেশের মধ্যে সুনাগরিক ও দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার জন্য দেশের মধ্যে উপযুক্ত কারিগরি শিক্ষা ও উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। বিদেশে পড়তে যাওয়া মেধাবী শিক্ষার্থীদের দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে।
৮) দেশের টাকা যাতে পাচার না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
৯) দেশের টাকা খরচের জবাবদিহিতা থাকতে হবে।
শিক্ষার্থী,ইয়াছিন আরাফাত
কবি ও গল্পকার।
অর্থনীতি বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
উপ-দপ্তর সম্পাদক, বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
0 coment rios: