☞ কচুরিপানা পানিতে ভাসে কেন?
কচুরিপানা (Water Hyacinth) একটি জলজ উদ্ভিদ, যা সহজেই পানিতে ভাসতে পারে। এটি মূলত এর দেহকাঠামো ও ভৌত বৈশিষ্ট্যের কারণে পানিতে ভাসতে সক্ষম। নিচে এর কারণ ব্যাখ্যা করা হলো—
১. কচুরিপানার কান্ডে বিশেষ রকমের বায়ুকুঠুরি (Aerenchyma) থাকে
- কচুরিপানার ফুলকন্দ (Petiole) বা কান্ড ফোলা এবং স্পঞ্জের মতো হয়।
- এর ভেতরে বায়ুকুঠুরি (Aerenchyma tissue) থাকে, যা বাতাসে পূর্ণ ছোট ছোট ফাঁপা কোষের স্তর তৈরি করে।
- এই বায়ুকুঠুরি পানির ঘনত্বের তুলনায় কম ঘনত্বের হওয়ায় উদ্ভিদকে পানিতে ভেসে থাকতে সাহায্য করে।
২. হালকা ওজন এবং সেলুলোজযুক্ত কাঠামো
- কচুরিপানার কান্ড ও পাতা তুলনামূলকভাবে হালকা ওজনের ও কোষ প্রাচীর পাতলা।
- এর দেহের অনেকাংশে সেলুলোজ ও বাতাসের উপস্থিতি একে পানিতে ভাসতে সাহায্য করে।
৩. শিকড় মাটিতে দৃঢ়ভাবে আটকায় না
- কচুরিপানার শিকড় মাটির গভীরে প্রবেশ করে না, বরং পানির উপরের স্তরে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে।
- এই কারণে এটি সহজেই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ভেসে যেতে পারে।
৪. পানির চাপের বিপরীতে ভারসাম্য রক্ষা করা
- কচুরিপানার দেহে হালকা ওজনের কাঠামো ও বায়ুকুঠুরির কারণে এটি পানির ওপরে থাকে এবং অধিকাংশ অংশ পানির নিচে ডুবে যায় না।
- এটি পৃষ্ঠটান (Surface tension) ও আভ্যন্তরীণ গঠন কাজে লাগিয়ে পানিতে ভারসাম্য বজায় রাখে।
কচুরিপানা মূলত বায়ুকুঠুরি, হালকা কাঠামো, শিকড়ের গঠন ও পানির চাপের ভারসাম্যের কারণে পানিতে ভাসতে সক্ষম। এর ভাসমান প্রকৃতি একে দ্রুত বিস্তার করতে সাহায্য করে, যার ফলে এটি অনেক সময় জলাশয়ে সমস্যা সৃষ্টি করে।
☞ লাইসোজোমকে জীবাণু ভক্ষণ বলা হয় কেন?
লাইসোজোমকে "জীবাণু ভক্ষণ" বা "সেলুলার ডাইজেস্টিভ সিস্টেম" বলা হয় কারণ এটি কোষের অভ্যন্তরে বিভিন্ন বিপজ্জনক উপাদান, জীবাণু ও অপ্রয়োজনীয় কোষীয় বস্তু হজম ও ধ্বংস করে। এর প্রধান কাজ হলো এনজাইমের মাধ্যমে কোষের বর্জ্য ও ক্ষতিকর পদার্থ ভাঙন ও পরিশোধন করা।
লাইসোজোমের জীবাণু ভক্ষণ ক্ষমতা ব্যাখ্যা
১. শক্তিশালী হাইড্রোলাইটিক এনজাইমের উপস্থিতি
লাইসোজোমে প্রায় ৫০টির বেশি হাইড্রোলাইটিক এনজাইম থাকে, যেমন—
- প্রোটেজ (প্রোটিন ভাঙে)
- লিপেজ (লিপিড বা চর্বি ভাঙে)
- নিউক্লিয়েজ (ডিএনএ ও আরএনএ ভাঙে)
- গ্লাইকোসিডেজ (কার্বোহাইড্রেট ভাঙে)
এই এনজাইমগুলো নিম্ন pH (4.5-5) পরিবেশে সক্রিয় থাকে, যা বিভিন্ন অনুজীব ও বর্জ্যকে দ্রুত ভেঙে ফেলে।
২. ফ্যাগোসাইটোসিসের মাধ্যমে জীবাণু ধ্বংস
কোষের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় লাইসোজোম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ফ্যাগোসাইটোসিসের (Phagocytosis) মাধ্যমে।
✅ ধাপে ধাপে প্রক্রিয়া:
- কোষের প্রতিরক্ষা কোষ (যেমন, ম্যাক্রোফাজ) ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসকে গিলে ফেলে।
- এটি লাইসোজোমের সঙ্গে মিশে যায় এবং বিশেষ এনজাইম ক্ষরণ করে।
- এনজাইম জীবাণুর কোষপ্রাচীর ও প্রোটিন ভেঙে ধ্বংস করে।
- ধ্বংসাবশেষ এক্সোসাইটোসিসের মাধ্যমে কোষের বাইরে বের করে দেওয়া হয়।
৩. অপ্রয়োজনীয় ও ক্ষতিগ্রস্ত কোষের অপসারণ (অটোফেজি)
লাইসোজোম শুধু জীবাণু ধ্বংস করে না, এটি অটোফেজি (Autophagy) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোষের ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গাণু ও অপ্রয়োজনীয় প্রোটিন গলিয়ে ফেলে।
✔ উদাহরণ: বার্ধক্যজনিত কোষ ও বিকলাঙ্গ মাইটোকন্ড্রিয়া ধ্বংস করা।
৪. কোষের আত্মহত্যা (অপোপটোসিস বা Autolysis)
কখনও কখনও লাইসোজোম নিজের এনজাইম নিঃসরণ করে কোষকে ধ্বংস করে (Autolysis), যা নিয়ন্ত্রিত কোষ মৃত্যু বা Apoptosis নামে পরিচিত।
✔ উদাহরণ: ভ্রূণের বিকাশের সময় আঙুলের মধ্যবর্তী ঝিল্লির কোষ ধ্বংস হয়ে আঙুলের গঠন তৈরি হয়।
লাইসোজোম কোষের অভ্যন্তরীণ পরিস্কারক ও প্রতিরক্ষাব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে। এটি জীবাণু, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, কোষের ক্ষতিকারক বস্তু ও কোষের নিজস্ব বর্জ্য হজম করে ধ্বংস করে। এই কারণে একে "জীবাণু ভক্ষণ" বলা হয়।
☞ বংশগতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে মিয়োসিসের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এর প্রধান ভূমিকা নিচে দেওয়া হলো—
-
অর্ধসংখ্যাপী (হ্যাপলয়েড) গ্যামেট তৈরি: মিয়োসিস কোষ বিভাজনের মাধ্যমে ডিপ্লয়েড (2n) কোষ থেকে হ্যাপলয়েড (n) গ্যামেট (যেমন, শুক্রাণু ও ডিম্বাণু) তৈরি হয়। ফলে যৌন জননের সময় যখন দুটি গ্যামেট সংযোজিত হয়, তখন নতুন জীব ডিপ্লয়েড সংখ্যক ক্রোমোসোম পায়, যা বংশগতির ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করে।
-
জিনগত বৈচিত্র্য সৃষ্টি: মিয়োসিসের "ক্রসিং ওভার" (Prophase I ধাপে) এবং "স্বাধীন বিভাজন" (Independent Assortment) প্রক্রিয়ার ফলে ক্রোমোসোমের বিন্যাস পরিবর্তিত হয়। এর ফলে নতুন জীবের মধ্যে বংশগত বৈচিত্র্য আসে, যা প্রাকৃতিক নির্বাচনে সহায়তা করে।
-
ক্রোমোসোম সংখ্যা স্থিতিশীল রাখা: যদি মিয়োসিস না হতো, তাহলে প্রতিটি প্রজন্মে ক্রোমোসোম সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যেত, যা জীবের স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত করত। মিয়োসিস প্রতিটি প্রজন্মে নির্দিষ্ট সংখ্যক ক্রোমোসোম বজায় রাখতে সহায়তা করে।
মিয়োসিস শুধুমাত্র জনন প্রক্রিয়াকে সহায়তা করে না, এটি জীববৈচিত্র্য সৃষ্টি ও প্রজন্মের মধ্যে জিনগত স্থিতিশীলতা বজায় রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
![]() |
১. কচুরিপানা পানিতে ভাসে কেন?
কচুরিপানা পানিতে ভাসতে পারে এর দেহের বিশেষ গঠনের কারণে। এর প্রধান কারণগুলো হলো—
- বায়ুকুঠুরি (Aerenchyma Tissue): কচুরিপানার কান্ডে ফাঁপা বাতাসপূর্ণ কোষ থাকে, যা একে পানিতে ভাসতে সাহায্য করে।
- হালকা ওজনের কাঠামো: পাতলা কোষপ্রাচীর ও স্পঞ্জের মতো কান্ড একে হালকা রাখে।
- শিকড়ের গঠন: শিকড় মাটির সঙ্গে শক্তভাবে আটকায় না, ফলে এটি সহজেই ভেসে থাকে।
২. লাইসোজোমকে জীবাণু ভক্ষণ বলা হয় কেন?
লাইসোজোমকে "জীবাণু ভক্ষণ" বলা হয় কারণ এটি কোষের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও বর্জ্য অপসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- ফ্যাগোসাইটোসিস: ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসকে গ্রাস করে এবং এনজাইম দিয়ে ধ্বংস করে।
- অটোফেজি: কোষের পুরোনো ও ক্ষতিগ্রস্ত অংশ গলিয়ে ফেলে।
- অপোপটোসিস: কোষের প্রয়োজন অনুযায়ী আত্মহত্যার মাধ্যমে কোষ অপসারণ করে।
৩. বংশগতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য মিয়োসিসের ভূমিকা (সংক্ষিপ্ত)
- গ্যামেট উৎপাদন: মিয়োসিস ডিপ্লয়েড (2n) কোষ থেকে হ্যাপলয়েড (n) গ্যামেট তৈরি করে, যা যৌন জননের জন্য প্রয়োজন।
- জিনগত বৈচিত্র্য: ক্রসিং ওভার ও স্বাধীন ক্রোমোসোম বিভাজনের ফলে নতুন বৈশিষ্ট্য সৃষ্টি হয়।
- ক্রোমোসোম সংখ্যা স্থিতিশীল রাখা: প্রতিটি প্রজন্মে নির্দিষ্ট সংখ্যক ক্রোমোসোম বজায় রাখে, যাতে সংখ্যা দ্বিগুণ না হয়।
এইভাবে মিয়োসিস বংশগতির ধারাবাহিকতা রক্ষা করে।
0 coment rios: