ইসলাম কোনো সাধারণ জীবনব্যবস্থা নয়। এটি পৃথিবীর সর্বোচ্চ স্মার্ট, ইন্টেলেকচুয়াল, স্পিরিচুয়াল, ও সিভিলাইজড জীবনব্যবস্থা, যা মানবজাতির জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে পরিপূর্ণ বিধান। অথচ আজ আমরা দেখতে পাই, কতিপয় লোক ইসলামের পবিত্রতা ও শ্রেষ্ঠত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়—কেবল কিছু ব্যক্তির ভুলের জন্য!
এই প্রবণতা নতুন কিছু নয়। ইতিহাস সাক্ষী, যুগে যুগে ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছে, কিন্তু ইসলাম বরাবরই সত্যের আলো ছড়িয়ে দিয়েছে।
"তারা চায় আল্লাহর নূর (ধর্ম) নিভিয়ে দিতে, কিন্তু আল্লাহ তাঁর নূরকে পূর্ণতা দান করবেন, যদিও অবিশ্বাসীরা তা অপছন্দ করে।"
(সূরা আস-সাফ, আয়াত ৮)
মূর্খতা বনাম প্রকৃত জ্ঞান
অনেকে মনে করেন, ধর্ম মানেই পিছিয়ে থাকা, ধর্ম মানেই অনাধুনিক চিন্তাধারা। অথচ বাস্তবতা সম্পূর্ণ উল্টো!
✅ ইসলাম বিজ্ঞানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ:
- ইসলামের বহু শিক্ষা আধুনিক বিজ্ঞানের সঙ্গে মিলে যায়। যেমন, জন্মের আগে ভ্রূণের ধাপে ধাপে বিকাশ—যা কুরআনে ১৪০০ বছর আগে বর্ণিত হয়েছে, অথচ আধুনিক বিজ্ঞান এটি মাত্র কয়েক দশক আগে আবিষ্কার করেছে।
- মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ (Big Bang Theory) সম্পর্কে কুরআন বলেছে—
"আমি আকাশকে সম্প্রসারণশীল করেছি।" (সূরা আয-জারিয়াত, আয়াত ৪৭)
- সাগরের গভীর অন্ধকার ও তরঙ্গ সম্পর্কে কুরআনের জ্ঞান আধুনিক সমুদ্রবিজ্ঞান দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে।
✅ ইসলাম সর্বোচ্চ সভ্যতা ও শিষ্টাচারের শিক্ষা দেয়:
- রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "যে উত্তম চরিত্র ধারণ করবে, সে জান্নাতে আমার সবচেয়ে কাছের ব্যক্তি হবে।" (তিরমিজি: ২০১৮)
- ইসলাম শিক্ষা দেয় দয়া, ন্যায়বিচার, সততা, মানবিকতা—যা একটি উন্নত সমাজ গঠনের জন্য অপরিহার্য।
✅ ইসলাম নারী অধিকারের পথপ্রদর্শক:
- যখন সারা বিশ্ব নারীদের মানুষ বলে গণ্য করত না, তখন ইসলাম নারীদের সম্মানজনক অধিকার দিয়েছে—বিয়ে, উত্তরাধিকার, শিক্ষা, সম্পত্তির মালিকানা ইত্যাদি।
- রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "তোমাদের মধ্যে সে-ই সর্বোত্তম, যে তার স্ত্রীর প্রতি সবচেয়ে ভালো আচরণ করে।" (তিরমিজি: ৩৮৯৫)
কেন ইসলামকে নয়, ব্যক্তির ভুলকে দোষী করা উচিত?
আজ আমরা দেখি, দাড়ি-টুপি পরা বা ইসলামী পোশাক পরা কিছু মানুষের ভুলের কারণে ইসলামকে কাঠগড়ায় তোলা হয়। অথচ এই চিন্তাধারা সম্পূর্ণ অজ্ঞতাপূর্ণ এবং অযৌক্তিক!
☑ একজন দুর্নীতিবাজ বিচারক থাকলে, আপনি কি গোটা বিচারব্যবস্থাকে বাতিল করেন?
☑ একজন অসৎ চিকিৎসক থাকলে, আপনি কি পুরো চিকিৎসাব্যবস্থাকে অস্বীকার করেন?
☑ একজন খারাপ বিজ্ঞানী থাকলে, আপনি কি বিজ্ঞানকে প্রত্যাখ্যান করেন?
তাহলে কিছু ভুল মানুষের কারণে কেন ইসলামকে প্রশ্নবিদ্ধ করবেন?
"তোমরা যা করো, তার জন্য তোমাদেরই জবাব দিতে হবে।" (সূরা আল-ইসরা, আয়াত ১৫)
ইসলাম কোনো ব্যক্তির আচরণের কারণে কলুষিত হয় না। কারণ ইসলামের শুদ্ধতা ও পবিত্রতা আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত। তাই ব্যক্তি যদি ভুল করে, তাহলে ভুল ব্যক্তির, ইসলামের নয়!
কাদের বিরুদ্ধে কথা বলা উচিত?
✅ যারা ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা না জেনে ইসলামকে অপবাদ দেয়।
✅ যারা নিজেদের স্বার্থে ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা করে।
✅ যারা ব্যক্তি বিশেষের দোষকে ইসলাম বলে প্রচার করে।
✅ যারা ধর্মকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে মানুষকে বিভ্রান্ত করে।
"তোমরা মিথ্যা প্রচার করো না, এবং সত্যকে আড়াল করো না।" (সূরা আল-বাকারা, আয়াত ৪২)
ইসলাম কখনো সস্তা জীবনব্যবস্থা নয়!
ইসলাম কোনো কল্পিত মতবাদ নয়, এটি আল্লাহর দেওয়া পরিপূর্ণ বিধান। এটি শুধু ব্যক্তিগত জীবন নয়, বরং রাষ্ট্র, সমাজ, পরিবার—সর্বক্ষেত্রেই সর্বোত্তম পথনির্দেশনা দিয়েছে।
কোনো সেকুলার মতবাদ ইসলামের সমকক্ষ হতে পারে না। কারণ—
✔ ইসলাম মানবজাতির মৌলিক প্রয়োজন মেটায়।
✔ ইসলাম সাম্য, ন্যায়বিচার ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করে।
✔ ইসলাম প্রকৃত অর্থেই ব্যক্তিগত ও সামাজিক মুক্তির পথ দেখায়।
তাই ইসলামের সমালোচনা না করে, যারা ইসলামকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে, তাদের সমালোচনা করুন। আর ইসলামের প্রকৃত জ্ঞান অর্জন করুন, কারণ সত্য কখনো মিথ্যার কাছে পরাজিত হয় না।
"তোমরা সত্যকে গ্রহণ করো, যদিও তা তোমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে হয়। কারণ সত্যই সর্বোচ্চ মহৎ!" (সূরা আন-নিসা, আয়াত ১৩৫)
ইসলামকে বোঝার চেষ্টা করুন, ব্যক্তির ভুলকে ইসলাম মনে করবেন না। ইসলামকে সঠিকভাবে চর্চা করুন, কারণ ইসলাম শুধু ধর্ম নয়—এটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা!
"হে আল্লাহ! আমাদের সত্যকে সত্য হিসেবে দেখার তৌফিক দিন, এবং মিথ্যাকে মিথ্যা হিসেবে দেখার তৌফিক দিন। আমিন!"
তৌফিক সুলতান, প্রধান সম্পাদক - দৈনিক অনুসন্ধান নিউজ ডেস্ক।
0 coment rios: