বাংলাদেশে তরুণ স্বেচ্ছাসেবীদের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি “ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড” অর্জন করেছেন ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার কৃতী সন্তান মো. খালেদ সাইফুল্লাহ। তার এই অর্জন শুধু ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, বরং বাংলাদেশের যুবসমাজের জন্য এক গর্বের অধ্যায়।
সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হল মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুস। অনুষ্ঠানে খালেদ সাইফুল্লাহর হাতে ক্রেস্ট ও সনদপত্র তুলে দেওয়া হয়। এসময় যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা, নৌপরিবহন উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবসহ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রতি বছর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সামাজিক ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখা তরুণদের রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দিয়ে আসছে। এ বছর সারাদেশ থেকে মাত্র ১২ জন তরুণকে নির্বাচিত করা হয়। শিক্ষা, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি ক্যাটাগরিতে মনোনীত দুজনের মধ্যে ঝালকাঠির খালেদ সাইফুল্লাহ একজন।
খালেদ সাইফুল্লাহর কাজ ও অবদান
২০২০ সালে তিনি নলছিটিতে প্রতিষ্ঠা করেন “তারুণ্যের নলছিটি”। সংগঠনের সভাপতি হিসেবে তিনি শিক্ষা, সচেতনতা, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও মানবিক নেতৃত্ব বিকাশে কাজ করে আসছেন। তার নেতৃত্বে Team STEM তৃণমূলের শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানচর্চায় অনুপ্রাণিত করেছে।
২০২৩ সালে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তিনি সহপ্রতিষ্ঠা করেন CARO, যেখানে সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে তরুণ নেতৃত্ব বিকাশ ও বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থার নতুন মডেল তৈরিতে কাজ করছেন। এছাড়া তার উদ্ভাবিত Youth Political Leadership Simulation Model তরুণদের হাতে-কলমে নীতি, নেতৃত্ব ও এডভোকেসি শেখাচ্ছে, যা স্থানীয় পর্যায়ে সমস্যা সমাধানে তরুণদের সক্রিয় করছে।
পুরস্কার গ্রহণের অনুভূতি
রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রাপ্তির পর খালেদ সাইফুল্লাহ বলেন—
“মাধ্যমিক পর্যায় থেকেই বন্ধুদের সঙ্গে দেশপ্রেম ও সামাজিক দায়বদ্ধতার চেতনায় স্বেচ্ছাসেবী কাজ শুরু করেছি। আজকের এই সম্মান শুধু আমার নয়, বরং তাদেরও যারা পাশে থেকে সহযোগিতা করেছেন। আমি এই পুরস্কার উৎসর্গ করছি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের নামে।”
তিনি আরও জানান, উপজেলা থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ে তার কার্যক্রমের প্রোফাইল দাঁড়িয়েছে ৮৫ পৃষ্ঠায়। স্থানীয় থেকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তারুণ্যের বিকাশ, শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন “তারুণ্যের নলছিটি”, “CARO” এবং “Team STEM”-এর মাধ্যমে।
রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও পুরস্কার
জাতীয় যুব স্বেচ্ছাসেবক পুরস্কার ২০২৪–২৫-এর অংশ হিসেবে তিনি পেয়েছেন—
- সরকারি স্বীকৃত সনদ ও সম্মাননা ট্রফি
- এক লক্ষ টাকা প্রাইজমানি
- জাতীয় পর্যায়ে আয়োজিত সংবর্ধনা
এবার সারাদেশ থেকে ১২ জন তরুণকে এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। খালেদ সাইফুল্লাহ ছাড়াও শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্যাটাগরিতে পুরস্কৃত হয়েছেন গাইবান্ধার মো. শাহাদৎ হোসেন। অন্যদিকে যুব উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানে পুরস্কার পেয়েছেন বগুড়ার সুরাইয়া ফারহানা রেশমা, মাগুরার মো. আক্কাচ খান এবং নোয়াখালীর মো. জাকির হোসেন। দেশপ্রেম, বীরত্ব ও সাহসিকতায় সম্মাননা পেয়েছেন পাবনা, রাজশাহী, লালমনিরহাট ও কক্সবাজারের কয়েকজন তরুণ। এছাড়া ক্রীড়া, কলা ও সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য সাতক্ষীরার আফঈদা খন্দকার এবং বান্দরবানের উছাই মং মার্মা সম্মানিত হয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টার দিকনির্দেশনা
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস অনুষ্ঠানে তরুণদের দেশের মূল চালিকাশক্তি উল্লেখ করে বলেন—
“তরুণ ও যুবকরা দেশের পক্ষে জেগে উঠলে কোনো শক্তি তাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আমরা তার প্রমাণ দেখেছি।”
তিনি আরও বলেন, তরুণদের স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম কেবল মানবকল্যাণেই নয়, বরং আত্মউন্নয়ন, চরিত্র গঠন ও নেতৃত্ব বিকাশের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবেশে তরুণদের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা হাজারো মানুষের জীবন বদলে দিতে পারে।
ব্যক্তিগত পরিচিতি ও শুভেচ্ছা
ব্যক্তিগতভাবে খালেদ সাইফুল্লাহকে জানি বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের মাধ্যমে। আমরা একই কমিটিতে কাজ করেছি। তখন থেকেই লক্ষ্য করেছি, তার কাজ ও লেখালেখির অগ্রগতি প্রশংসনীয়। তার এই রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি আমাদের সবার জন্য অনুপ্রেরণা।
মো. খালেদ সাইফুল্লাহর এই অর্জন শুধু তার ব্যক্তিগত নয়, বরং ঝালকাঠি তথা পুরো বাংলাদেশের তরুণ সমাজের জন্য এক গর্বের অধ্যায়। তার কাজের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে—সত্যিকারের স্বেচ্ছাসেবা, উদ্ভাবনী চিন্তা ও তরুণ নেতৃত্ব একদিন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির যোগ্য হয়েই ওঠে।
|
0 coment rios: