বাংলাদেশের লাখো শিক্ষার্থীর জন্য আজকের দিনটি এক বিশেষ মাইলফলক। ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল আজ প্রকাশিত হয়েছে। কেউ হাসছে, কেউ কাঁদছে—কারও মুখে আনন্দের উচ্ছ্বাস, কেউ নিঃশব্দে চোখ মুছছে। বাস্তবতা হলো, ফলাফল যতটা গুরুত্বপূর্ণ, তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো—ফলাফলের পর তোমার মানসিক প্রস্তুতি ও জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি।
ফলাফলে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের করণীয়:
যারা ভালো ফলাফল করেছে, তাদের জন্য এটি নিঃসন্দেহে একটি বড় প্রাপ্তি। কিন্তু এটিই শেষ নয়, বরং আগামী দিনের প্রস্তুতির সূচনা। একাদশ শ্রেণির বিষয় নির্বাচন, কলেজ বাছাই, নিজের আগ্রহ ও ভবিষ্যৎ পেশাগত স্বপ্ন—সবকিছু এখন ধীরে ধীরে গুরুত্ব পাবে। বিজ্ঞান, মানবিক বা ব্যবসায় শিক্ষা—যেটিই নির্বাচন করো না কেন, সেটির প্রতি পূর্ণ মনোযোগ দেওয়া দরকার। অনেক সময় দেখা যায়, এসএসসি পর্যন্ত ভালো ফল করলেও একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে লক্ষ্য হারিয়ে ফেলে অনেক শিক্ষার্থী। তাই এখনই সময় নিজেকে চিনে নেওয়ার, নিজের ভিতরকার প্রতিভা খুঁজে বের করার এবং প্রফেশনাল দৃষ্টিকোণ থেকে আগাম প্রস্তুতি নেওয়ার। ইংরেজি ভাষা, কম্পিউটার স্কিল, টাইপিং, গণিত, লজিক—এই বিষয়গুলোতেও পারদর্শিতা অর্জনের দিকে মনোযোগী হতে হবে। কারণ আগামী যুগ হবে স্কিল-ভিত্তিক শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের যুগ।
যাদের ফলাফল প্রত্যাশামতো হয়নি — মন খারাপ নয়, পরিকল্পনা করো:
প্রত্যেক বছর ফল প্রকাশের পর একটি চিত্র বারবার দেখা যায়—অনেক শিক্ষার্থী আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে, সমাজের কটুক্তিতে ভেঙে পড়ে। এই মনোভাব অত্যন্ত বিপজ্জনক ও ক্ষতিকর। আমাদের বুঝতে হবে, একটি পরীক্ষার ফলাফল জীবনের সামগ্রিক মূল্যায়ন নয়। কেউ যদি এবার খারাপ করে, তার মানে সে ব্যর্থ নয়—বরং সে বুঝেছে কোথায় তার দুর্বলতা ছিল। বাস্তবতা হলো, ব্যর্থতা মানুষের সবচেয়ে বড় শিক্ষক।
বিশ্বের বহু সফল মানুষ স্কুলজীবনে বারবার ব্যর্থ হয়েছেন—কিন্তু তারা হাল না ছেড়ে পরবর্তীতে ইতিহাস রচনা করেছেন। তাই এসএসসি ফল খারাপ হওয়া মানেই জীবন শেষ নয়; বরং এখন থেকেই নতুনভাবে প্রস্তুতি শুরু করার সময়। পরবর্তী একাদশ শ্রেণিতে ভালো ফলাফল করে নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ এখনও আছে। অভিভাবক ও শিক্ষকদেরও উচিত—সমালোচনা না করে, সন্তানকে ভালোভাবে বোঝানো ও সাহস জোগানো।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সমাজের প্রতি আহ্বান:
ফলাফলের উপর ভিত্তি করে মানবিকতা ভুলে গিয়ে কাউকে ছোট করে দেখা, অবজ্ঞা করা কিংবা তুলনা করা—এগুলো কখনোই একজন সচেতন অভিভাবক বা সমাজের দায়িত্বশীল আচরণ হতে পারে না। বরং আমাদের উচিত শিক্ষার্থীর মনের পাশে দাঁড়ানো, তার দুর্বলতা বুঝে পরবর্তী যাত্রাপথে সে যেন আত্মবিশ্বাস ফিরে পায়, সেটার ব্যবস্থা করা।
জীবন একমাত্র পরীক্ষার নাম নয়—প্রতিটি সকাল একটি নতুন সম্ভাবনা।
আল্লাহ্ কোরআনে বলেন, “নিশ্চয়ই কষ্টের সাথে রয়েছে স্বস্তি।” (সূরা ইনশিরাহ, আয়াত ৬)। একজন শিক্ষার্থী জীবনের পথে একবার হোঁচট খেতে পারে, কিন্তু সেখান থেকে উঠে দাঁড়ানোর শক্তি যার আছে, সাফল্য একদিন তার ঘরেই কড়া নাড়বে। কাজেই, এসএসসি ২০২৫-এর ফলাফল হোক একজন শিক্ষার্থীর আত্মবিশ্বাস, চেতনা ও মানসিক বিকাশের নতুন সূচনা। আমরা চাই—বাংলাদেশের প্রতিটি শিক্ষার্থী সফল হোক, আলো ছড়াক, আর নিজেকে গড়ার মাধ্যমে দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎকে আলোকিত করুক।
তৌফিক সুলতান,প্রভাষক - ব্রেভ জুবিলেন্ট স্কলার্স অফ মনোহরদী মডেল কলেজ,মনোহরদী, নরসিংদী।
towfiqsultan.e@gmail.com
0 coment rios: